আপওয়ার্ক মার্কেটপ্লেস পরিচিতি

Introduction to Upwork Marketplace

ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং। এই মুক্ত পেশায় তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বেশি। ঘরে বসে বিদেশের তথ্যপ্রযুক্তির নানা কাজ করে আয় করেন ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবীরা। কিন্তু শুরুটা কীভাবে করতে হবে, ফ্রিল্যান্সার হতে কী জানতে হবে—এ নিয়ে দ্বিধা অনেকের। অনেকে সঠিক দিকনির্দেশনাও পান না।

আমাদের দেশে যখন ফ্রিল্যান্স কাজের সুযোগ চালু হয়, তখন মার্কেটপ্লেস হিসেবে চাহিদার শীর্ষে ছিল oDesk, Elance এবং Freelancer. com। পরে oDesk এবং Elance এক হয়ে আপওয়ার্ক নামে কার্যক্রম শুরু করে। মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়ার জন্য সাধারণত ক্লায়েন্টদের পোস্ট করা কাজ অন্যদের সঙ্গে বিড বা প্রতিযোগিতা করে সংগ্রহ হয়। তবে Fiverr মার্কেটপ্লেস গিগ বেজড মডেল নিয়ে কাজ করায় বিড না করেও নিজের তৈরি বিভিন্ন কাজ বা সেবা বিক্রি করার সুযোগ মিলে থাকে। আজ আমরা আপওয়ার্ক মার্কেটপ্লেসের বিভিন্ন তথ্য নিয়ে আলোচনা করব।

দীর্ঘমেয়াদি কাজের সুযোগ থাকায় বেশির ভাগ ফ্রিল্যান্সারই আপওয়ার্ক মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। অনেক ধরনের কাজের সুযোগের পাশাপাশি প্ল্যাটফর্মটিতে ঘণ্টাভিত্তিক বা নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে কাজের সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে ফাইভারের আদলে প্রজেক্ট ক্যাটালগ সার্ভিসও চালু করেছে আপওয়ার্ক। ফলে নিজের তৈরি করা বিভিন্ন কাজ বা সেবা ক্লায়েন্টের কাছে সরাসরি বিক্রি করা যায় প্ল্যাটফর্মটিতে। ফলে ফ্রিল্যান্সারদের কাজের জন্য বিড করতে হয় না; বরং ক্লায়েন্টরাই ফ্রিল্যান্সারদের তৈরি করা সেবা কিনে থাকে। আপওয়ার্কে ক্লায়েন্টের অর্ডারের জন্য বসে না থেকে নিজেই নিজের দক্ষতা অনুযায়ী কাজ খুঁজে আবেদন করা যায়।

আপওয়ার্কে কাজ করার সুবিধাঃ

১. ঘণ্টাভিত্তিক কাজ করার যায় আপওয়ার্কে। অর্থাৎ আপনি যতক্ষণ কাজ করবেন ততক্ষণের পারিশ্রমিক পাবেন। পারিশ্রমিক পাওয়া নিয়েও চিন্তা নেই, ক্লায়েন্টের কাছ থেকে সংগ্রহ করে আপনার পারিশ্রমিক পরিশোধ করবে প্ল্যাটফর্মটি।

২. নিজের পছন্দমতো কাজ খুঁজে সরাসরি বিড করা যায়।

৩. ক্লায়েন্টের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আপওয়ার্কে সরাসরি বার্তা বিনিময়ের পাশাপাশি ভয়েস এবং ভিডিও কলও করা যায়। সম্প্রতি ক্রেতাদের সঙ্গে স্বচ্ছন্দে কথা বলার সুযোগ দিতে জুম সেবা ব্যবহারের সুযোগ চালু করেছে মার্কেটপ্লেসটি।

৪. বায়ার বা ফ্রিল্যান্সারদের যেকোনো সমস্যার সমাধান দিতে খুবই ভালো সেবা দিয়ে থাকে আপওয়ার্ক। মার্কেটপ্লেসটির লাইভ সাপোর্ট চ্যাট সুবিধা কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন তথ্য জানা যায়। সাধারণত এক থেকে দুই মিনিটের মধ্যেই লাইভ সাপোর্ট চ্যাটে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান বা পরামর্শ দিয়ে থাকে আপওয়ার্ক।

৫. সরাসরি ফ্রিল্যান্সারদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে থাকেআপওয়ার্ক। Wire Transfer, Payoneer, US Bank Account, Wise এর মাধ্যমে ডলার পাঠিয়ে থাকে মার্কেটপ্লেসটি।

৬. আপওয়ার্কে প্রোফাইল সাজানোর জন্য পোর্টফোলিও বিভাগের সহায়তা নেওয়ার পাশাপাশি সার্টিফিকেট সেকশনের মাধ্যমে নিজের দক্ষতা ভালোভাবে উপস্থাপন করা যায়। শুধু তাই নয়, মার্কেটপ্লেসটিতে দক্ষতাবিষয়ক বেশ কয়েকটি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ মিলে থাকে। পরীক্ষার ফলাফল নিজেদের প্রোফাইলে যুক্ত করে ক্লায়েন্টদের কাছে নিজেদের দক্ষতা ভালোভাবে তুলে ধরা যায়।

৭. আপওয়ার্কে প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি স্কিল উপস্থাপনের জন্য একাধিক স্কিল প্রোফাইল যুক্ত করা যায়। পাশাপাশি ক্লায়েন্ট এবং ফ্রিল্যান্সার উভয়েই একে অন্যকে রেটিং দিতে পারেন।

৮. আপওয়ার্কে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একাধিক কর্মীর সমন্বয়ে দল তৈরি করে কাজ করতে পারে। শুধু তাই নয়, আপওয়ার্কের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত থাকা ক্লায়েন্টের সংখ্যা বেশি থাকায় তারা সাধারণত পুরোনো ফ্রিল্যান্সারদের খুঁজে কাজ দিয়ে থাকেন। আর তাই দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক তৈরি করে কাজ করার জন্য আপওয়ার্ক খুবই ভালো মার্কেটপ্লেস।

৯. আপওয়ার্কে ট্যালেন্ট স্কাউট নামের একটি ফিচার রয়েছে, যা ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতা বিবেচনা করে তাদের উপযোগী কাজগুলো নিয়মিত প্রদর্শন করে থাকে। এ ছাড়া অভিজ্ঞতা এবং যোগ্যতা অনুসারে ফ্রিল্যান্সারদের টপ রেটেড, টপ রেটেড প্লাস, আপওয়ার্ক সার্টিফায়েড নামেও পরিচিত করে মার্কেটপ্লেসটি। ফলে ক্লায়েন্টদের কাছে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণের জন্য বাড়তি কষ্ট করতে হয় না।

১০. আপওয়ার্কে কোনো ক্লায়েন্টের কাছ থেকে ৫০০ ডলারের বেশি আয় করলে ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দিতে হয়। তবে আয়ের পরিমাণ ১০ হাজার ডলারের বেশি হলে সার্ভিস চার্জ দিতে হয় মাত্র ৫ শতাংশ। ফলে যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে একই ক্লায়েন্টের কাজ করেন, তাঁরা কম সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে নিজেদের পারিশ্রমিক সংগ্রহ করতে পারেন।

অনেক সুবিধার পাশাপাশি বেশ কিছু অভিযোগও রয়েছে আপওয়ার্কের বিরুদ্ধে। অনেকেই অভিযোগ করেন, একসঙ্গে অনেক বেশি আবেদন করার পর কাজ না পেলে অ্যাকাউন্ট বাতিল করে দেয় মার্কেটপ্লেসটি। সাধারণত নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা ব্যক্তিরা এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হন। অভিযোগটি একদিকে যেমন সত্য অন্যদিকে সত্য নয়। বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, যোগ্যতা না থাকলেও ক্লায়েন্টদের কাজ করার আবেদন করেন অনেকে। এমনকি কাজের ধরন না বুঝেও আবেদন করেন কেউ কেউ। ফলে ক্লায়েন্টরা বিরক্ত হয়ে মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে কাজ করানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। আর তাই ক্লায়েন্ট এবং দক্ষ ফ্রিল্যান্সারদের সহায়তা করতেই এমন কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে থাকে আপওয়ার্ক। তবে যারা নিয়ম মেনে কাজের আবেদন করেন, তাঁদের জন্য আপওয়ার্ক খুবই ভালো।

আপওয়ার্কে কাজ করার জন্য ভার্চু৵য়াল মুদ্রা ‘কানেক্ট’ কিনতে হয়। আপওয়ার্কের কানেক্ট মুদ্রা ব্যবহার করেই ফ্রিল্যান্সারদের কাজের জন্য বিড করতে হয়। সাধারণত বিড করতে কাজ ভেদে দুই থেকে ছয় কানেক্ট খরচ হয়। কাজে বিড করার জন্য অ্যাকাউন্ট খোলার সময়ই ৫০টি কানেক্ট বিনা মূল্যে দিয়ে থাকে মার্কেটপ্লেসটি। সব কানেক্ট খরচ হয়ে গেলে ১৫ সেন্টের বিনিময়ে এক কানেক্ট কিনতে হয়। তবে ক্লায়েন্ট বা ট্যালেন্ট স্কাউট যদি কাউকে কাজ করার আমন্ত্রণ জানায়, তবে কাজ করার জন্য কোনো কানেক্ট খরচ হয় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *