সঠিক রিজ্যুমি/সিভি লেখার কিছু টিপস (প্রথম পর্ব)

How To Write Effective CV/Resume Or Tips For Writing Correct CV/Resume – Part 1

আপনি হয়তো বারবার চাকরি থেকে বহিষ্কৃত হচ্ছেন কিংবা আপনার রিজ্যুমির সাথে মিল রেখে সঠিক চাকরি খুঁজছেন অথবা উপযুক্ত রিজ্যুমি লিখতে গিয়েও থমকে যাচ্ছেন। এই সমস্যাগুলো সবার ক্ষেত্রেই হতে পারে। কিন্তু আপনি কি জানেন যে, রিক্রুটাররা গড়ে ৩.১৪ মিনিট ব্যয় করেন শুধুমাত্র রিজ্যুমি/সিভি পড়ে দেখতে। এমনকি প্রত্যেক ৫ জন ক্যান্ডিডেটের মধ্যে একজন ইন্টারভিউ থেকে রিজেক্ট হয় শুধুমাত্র রিজ্যুমির কারণে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে, চাকরি খোঁজার শুরু থেকে ধরেই সঠিক আর উপযুক্ত রিজ্যুমি তৈরি করাটা খুবই প্রয়োজনীয় ধাপ। চলুন তাহলে জেনে নিই, রিজ্যুমি/সিভি লেখার এমন কিছু টিপস সম্পর্কে। দুই পর্বের এই আর্টিকেলের আজকে হচ্ছে প্রথম পর্ব।

প্রফেশনাল ইমেইল অ্যাড্রেস তৈরি করার চেষ্টা করুন

শুরুতেই ইমেইল এড্রেস নিয়েই কথা বলতে হচ্ছে কারণ প্রফেশনাল ইমেইল অ্যাড্রেস তৈরি করাটা সবার জন্যই জরুরী। কারণ, একশভাগের মাঝে ছিয়াত্তর ভাগ ক্যান্ডিডেটই শুধুমাত্র প্রফেশনাল ইমেইল অ্যাড্রেস না থাকার কারণে চাকরি পায় না। সুতরাং আপনি যদি এখনো অনেক আগের তৈরি করা ইমেইল অ্যাড্রেস ব্যবহার করতে থাকেন তাহলে আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস পরিবর্তন করার সময় এসেছে। চেষ্টা করবেন অন্যান্য ইমেইল ক্লায়েন্টের বদলে জিমেইল অথবা আউটলুক মেইল ব্যবহার করার।

আপনার যোগাযোগের তথ্য আপডেট করুন

ইমেইল অ্যাড্রেস পরিবর্তনের সাথে সাথেই চেষ্টা করবেন রিজ্যুমিতে দেয়া যোগাযোগের তথ্য পরিবর্তন করতে। নিশ্চয়ই আপনি চাইবেন না যাতে ভুল নাম্বারে ফোন দিয়ে রিক্রুটাররা আপনার উপর শুরু থেকেই অসন্তুষ্ট হোক। যোগাযোগের তথ্যে অনেক ক্ষেত্রেই ক্যান্ডিডেটরা জন্ম তারিখ ও বৈবাহিক অবস্থার উল্লেখ করেন না, যেটা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা উচিত।

রিজ্যুমির ফন্টের আকার দশ কিংবা বারো ব্যবহার করুন

সবসময় খেয়াল রাখবেন যাতে রিজ্যুমি কম্পিউটারে টাইপ করার সময় ফন্টের আকার দশ কিংবা বারো হয়। অতিরিক্ত ছোট আকারের ফন্ট ব্যবহার করলে রিক্রুটারদের পড়তে সমস্যা হতে পারে আবার অতিরিক্ত বড় আকারের (যেমন: ১৭, ২০, ২৫ ইত্যাদি) ফন্ট ব্যবহার করলেও রিজ্যুমি দেখতে খারাপ দেখাবে, যেটা আপনার রিজ্যুমির ডিজাইন নষ্ট করে দেবে।

রিভার্স ক্রনোলজিক্যাল অর্ডারে তথ্য যুক্ত করুন

অনেক রিজ্যুমিতে দেখা যায় যে, ক্যান্ডিডেট তার পূর্বের চাকরির অবস্থান থেকে শুরু করে একেবারে শেষের দিকে বর্তমান চাকরির তথ্য দিয়ে থাকেন। এটাকে বলে ক্রনোলজিক্যাল অর্ডার। আপনাকে বর্তমান চাকরির অবস্থান থেকে শুরু করে তারপর শেষের দিকে পূর্বের চাকরির অবস্থান সম্পর্কে লিখতে হবে। এটাই হচ্ছে রিভার্স ক্রনোলজিক্যাল অর্ডার। একইভাবে শিক্ষাজীবনের তথ্যেও রিভার্স ক্রনোলজিক্যাল অর্ডার ব্যবহার করা উচিত।

রিজ্যুমির অ্যালাইনমেন্ট বামদিকে সরিয়ে রাখুন

রিজ্যুমি টাইপ করার সময় অনেকেই অতিরিক্ত ডিজাইন করতে গিয়ে রিজ্যুমির ডিফল্ট অ্যালাইনমেন্ট বাম দিক থেকে সরিয়ে ডানে বা মাঝখানে নিয়ে আসেন, যেটা করা একেবারেই উচিত নয়। রিজ্যুমির অ্যালাইনমেন্ট সরিয়ে ফেলা মানে রিক্রুটারের জন্য তথ্য খোঁজাটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সেক্ষেত্রে রিক্রুটার হয়তো ঝামেলা মনে করে আপনার রিজ্যুমি রিজেক্ট করে দিতে পারেন।

বোল্ড, ইটালিক ও আন্ডারলাইনের সঠিক ও উপযুক্ত ব্যবহার করুন

রিজ্যুমি লেখার সময় অনেকেই বোল্ড, ইটালিক ও আন্ডারলাইনের যথাযথ ব্যবহার না করে, যেখানে সেখানে লেখা বোল্ড করে রাখেন কিংবা কোনো লেখা ইটালিক করলে অন্য লেখা আন্ডারলাইন করে রাখেন, যেটা করা সম্পূর্ণ নিষেধ। যদি আপনি একটি সাবহেডিংয়ে আন্ডারলাইন ব্যবহার করে থাকেন তাহলে প্রত্যেক সাবহেডিং আন্ডারলাইন করুন। মনে রাখবেন, বোল্ড, ইটালিক কিংবা আন্ডারলাইন ব্যবহার করা হয় লেখা ফরমেটিংয়ের কাজে, ডিজাইন করার জন্য নয়।

সঠিক, উপযুক্ত ও প্রফেশনাল ফন্ট ব্যবহার করুন

আপনার কাছে হয়তো মনে হতে পারে যে, রিজ্যুমি লেখার ক্ষেত্রে ফন্টের স্টাইল তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা পালন করে না, কিন্তু প্রফেশনাল ফন্ট ব্যবহারের কারণে আপনার রিজ্যুমি দেখতে আরো বেশি আকর্ষণীয় ও পড়ার যোগ্য হয়ে উঠবে। সুতরাং রিজ্যুমি লেখার সময় ভেরদানা (Verdana), অ্যারিয়াল (Arial) অথবা হেলভেটিকার (Helvetica) মতো ফন্ট ব্যবহার করা উচিত। অন্যদিকে কমিক স্যানস (Comic Sans), প্যাপিরাস (Papyrus) কিংবা কার্লস এমটির (Curlz MT) মতো ফন্ট ব্যবহার থেকে দূরে থাকবেন।

সহজ ও সাবলীল সাবহেডিং ব্যবহার করুন

রিজ্যুমি লেখার ক্ষেত্রে অনেক ক্যান্ডিডেটকেই দেখা যায় যে, তারা সাবহেডিং হিসেবে তিন অথবা চার শব্দ ব্যবহার করে থাকে কিংবা জটিল ধরণের সাবহেডিং লিখে থাকে। সাবহেডিংয়ের এই জটিলতার কারণে আপনার রিজ্যুমি বাতিল হয়ে যেতে পারে। সঠিক ও উপযুক্ত কিছু সাবহেডিং হচ্ছে রিজ্যুম সামারি (Resume Summary), এক্সপেরিয়েন্স (Experience), এডুকেশন (Education), স্কিলস (Skills) ইত্যাদি। জটিল ও অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু সাবহেডিং হচ্ছে অ্যাবাউট মি (About Me), অ্যাক্রিডিটেশন (Accreditation), প্রফেশনাল ব্যাকগ্রাউন্ড (Professional Background), ওয়ার্ক হিস্টোরি (Work History) ইত্যাদি।

রিজ্যুমির সফট কপিতে ইউ আর এল যুক্ত করুন

যদি আপনি সফট কপিতে অর্থাৎ পিডিএফ কিংবা ফাইল আকারে আপনার রিজ্যুমি তৈরি করে থাকেন তাহলে সেখানে অবশ্যই আপনার ওয়েবসাইটের লিংক, পূর্বে যেসব কোম্পানিতে কাজ করেছেন তাদের ওয়েবসাইটের লিংক, আপনার পোর্টফোলিওর লিংক, ফেসবুক প্রোফাইলের লিংক, লিংকডিন প্রোফাইলের লিংক ইত্যাদি যুক্ত করুন।

সঠিক ধাপে রিজ্যুমি সেকশন যুক্ত করুন

রিজ্যুমির টেমপ্লেট বাছাই করা শেষ হয়ে গেলে অবশ্যই সঠিক লে আউটে রিজ্যুমি তৈরি করুন। সবসময় চেষ্টা করবেন সঠিক ধাপে রিজ্যুমির প্রত্যেকটি সেকশন যুক্ত করতে। আপনার নাম দিয়ে রিজ্যুমি লেখা শুরু করবেন। তারপরের সেকশন হওয়া উচিত আপনার যোগাযোগের তথ্য। এই সেকশনের পর যুক্ত করুন রিজ্যুমি সামারি বা অবজেকটিভ। তারপর, যদি আপনি একজন শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার শিক্ষাজীবনের তথ্য যুক্ত করুন আর যদি একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি হয়ে থাকেন তাহলে আপনার এক্সপেরিয়েন্স সেকশন যুক্ত করুন।

বারবার চাকরির বিস্তারিত বর্ণনা পড়ুন

আপনি হয়তো চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে শুরুতেই চাকরির বিস্তারিন বর্ণনা পড়েছেন। কিন্তু তারপরেও আপনার উচিত বারবার সেই বর্ণনা পড়ে দেখা। কারণ ক্যান্ডিডেটরা গড়ে মাত্র ৭৬ সেকেন্ড সময় ব্যয় করেন চাকরির বিস্তারিত বর্ণনা পড়ার ক্ষেত্রে। তাই আপনার উচিত বারবার চাকরির বিস্তারিত বর্ণনা পড়ে দেখা যাতে কোনো কিছুই বাকি না থেকে যায়।

তথ্যসুত্রঃ http://youthcarnival.org/bn/resume-writing-tips-for-landing-on-a-perfect-job-part-one/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *