যেখানে ইন্টার্নশিপ, সেখানেই চাকরি

ইন্টার্নশিপ দিয়েই শুরু। এই শুরুর সময়টায় যদি আপনি এটি মাথায় নিয়ে ইন্টার্নশিপে নামেন যে, যেই প্রতিষ্ঠানে আপনি ইন্টার্নশিপ করবেন সেটাই হবে আপনার চাকরি ক্ষেত্র। তবে সেটা একেবারেই সম্ভব। কাজে একটু মনোযোগী হলেই ইন্টার্নশিপ প্রতিষ্ঠানে পারমান্যান্ট চাকরি পাওয়া খুবই ডাল-ভাতের মতো ব্যাপার! তাই ইন্টার্নশিপে নামার আগে পছন্দের কোম্পানি ঠিক করে নিজের সঙ্গে একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে নামুন। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আবার সাপোর্ট এবং রিসোর্স শেয়ারিংও গুরুত্বপূর্ণ। আর ঘাবড়াবেন না; কারণ আপনি শিক্ষানবিশ হিসেবে যেই প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপে যাচ্ছেন, সেই প্রতিষ্ঠান কিন্তু আপনাকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করাটাকে তাদের কর্তব্যই মনে করে। তাই বলাই যায় যে, স্বপ্নের বীজটা বপন করা হয় মূলত ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে। গ্র্যাজুয়েশন ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের মেজর বিষয়গুলোর প্র্যাকটিকাল প্রতিফলন ঘটে ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে।

শুরুর আগে

ইন্টার্নশিপে কাজ শুরুর আগে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে কোন সাইডে আপনি দক্ষতা অর্জন করতে চান, নতুন কী আয়ত্ত করতে চান এবং কীভাবে নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চান- এসব ঠিক করে নেওয়া। তবে এমন কিছু আশা করবেন না, যা অর্জন করা আপনার পক্ষে অসম্ভব। তাছাড়া জানেনই তো, ইন্টার্নশিপ নির্দিষ্ট একজনের অধীনে বা তত্ত্বাবধানে করতে হয়। সেই তত্ত্বাবধায়ক বা সুপারভাইজারের সঙ্গে ভালো একটা সম্পর্ক রাখতে হবে। যে কোনো আইডিয়া এই তত্ত্বাবধায়ক বা সুপারভাইজারের সঙ্গে আলোচনা করুন। এতে করে আপনার সঙ্গে সুপারভাইজারের একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হবে। শুধু তাই নয়, এতে আপনি অনেক বেশি শিখতেও পারবেন।

ইন্টার্নশিপ থেকে চাকরি

অনেক প্রতিষ্ঠানেই এখন ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ মেলে। প্রতিষ্ঠানগুলোও ইন্টার্নশিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই কর্মী নিয়োগ করছে। ইন্টার্নশিপের সময়টা শিক্ষার্থী যেমন নিজের দক্ষতা তৈরিতে কাজে লাগাতে পারে, তেমনই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিভিন্ন বিভাগের কর্মীর ঘাটতি পূরণ করতে পারে। ব্র্যাকের বিভিন্ন কার্যক্রমে তরুণদের ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ আছে। যাঁরা ভবিষ্যতে উন্নয়নকর্মী হিসেবে কাজ করবেন, গবেষণা করবেন, তাঁরা এখানে ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে হাতে–কলমে শেখার সুযোগ পান। বাংলাদেশের নানা প্রান্তের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সংযুক্তির মাধ্যমে ইন্টার্নরা হাতে–কলমে নানা বিষয়ে জানার সুযোগ পান।

আপনার কর্তব্য

সব ধরনের প্রতিষ্ঠানই শিক্ষানবিশদের ইন্টার্নশিপের পেছনে কিছু ব্যয় করে। সুতরাং তারা শিক্ষানবিশদের দিয়ে কিছু বাড়তি কাজ করিয়ে নেয়। এগুলো সুকৌশলে পালন করা শিক্ষানবিশদের কর্তব্য। এতে বিরক্ত না হয়ে কাজগুলো শেখার মানসিকতা নিয়েই করে যান। এ ছাড়া অভিযোগ, অশুভ আচরণ, সহযোগীদের সঙ্গে অশালীন কথা, দেরিতে অফিসে আসা এবং অন্যদের আগে অফিস ত্যাগ করা, ডেটলাইন মিস ও অফিস পলিসি না মানা কিন্তু নিজের জন্যই ক্ষতিকর। তাই এসব এড়িয়ে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করুন।

যে প্রতিষ্ঠানেই ইন্টার্নশিপ করুন না কেন, ভবিষ্যতে যে ক্ষেত্রে কাজ করতে চান, তার সঙ্গে যেন তা সংগতিপূর্ণ হয়। এতে সময় নষ্ট হবে কম আর ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কেও আপনার পূর্বধারণা থাকবে। ইন্টার্নশিপ যেন হয় ‘ফোকাসড’। আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেকেই সার্টিফিকেটের জন্য ইন্টার্নশিপ করতে চান, এটা নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারার শামিল। ইন্টার্নশিপ বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ও ভবিষ্যতের কর্মজীবনের মধ্যে সংযোগ সেতু তৈরি করে। এই সুযোগ নিজেকে তৈরির জন্য গুরুত্বসহকারে নিতে হবে। কাজ শেখার সুযোগ আছে, এমন যেকোনো প্রতিষ্ঠানেই ইন্টার্নশিপ করা যেতে পারে।

খুঁটিনাটি জানা

ইন্টার্নশিপ মূলত একটি নির্দিষ্ট ডিপার্টমেন্ট, সুপারভাইজার ও শিক্ষানবিশদের চক্রে আবদ্ধ। কিন্তু আপনি তাতে আবদ্ধ না থেকে প্রতিষ্ঠানের সব মিটিং, ওয়ার্কশপ, কনফারেন্স, ইভেন্টে নিয়মিত অংশগ্রহণ করুন। এতে প্রতিষ্ঠানের খুঁটিনাটি বিষয় জানতে পারবেন। অন্য ডিপার্টমেন্টের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং প্রতিষ্ঠানের সোশ্যাল ইভেন্টে অংশগ্রহণ করুন। সব জায়গায় নিজের আইডিয়া শেয়ার করুন। যত বেশি অন্যদের সঙ্গে আইডিয়া শেয়ার করবেন, ততই শিখতে পারবেন।

সবকিছুর মতোই চাকরির বাজারে প্রতিদিনই হাজারো পরিবর্তন আসছে। ইন্টার্নশিপের শুরু থেকেই এই পরিবর্তনের জন্য তৈরি থাকতে হবে। সবকিছুর জন্য নিজেকে তৈরি রাখুন। দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও সংকটগুলো সম্পর্কে টুকটাক ধারণা রাখতে হবে। কোন ইন্ডাস্ট্রি কখন কেমন করছে, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনা কেমন—এসব বিষয়ে বিশেষ নজর রাখা জরুরি।

বুঝে নিন কাজ

ইন্টার্নশিপ কিন্তু লার্নিং প্রসেস। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যে ধরনের কাজ আপনার কাছ থেকে আশা করছেন, সে বিষয়ে আপনার কোনো ধারণা না থাকাটাই স্বাভাবিক। ফলে কাজটা ভালো করে বুঝে নিন। আর এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নিঃসংকোচে প্রশ্ন করে যান। একবার না পারলে কোনো কাজ বারবার চেষ্টায়ও সফলতা আনতে পারেন। কারণ এখানে আপনি অভিজ্ঞতা নিতেই এসেছেন। যেই অভিজ্ঞতা আপনার জীবনবৃত্তান্ত এবং ক্যারিয়ার পোর্টফোলিওতে উল্লেখ করতে পারবেন। ইন্টার্নশিপ সত্যিই ক্যারিয়ারের বড় ধরনের একটি অভিজ্ঞতা। নতুন পরিবেশে নিজেকে কাজের জন্য উপযুক্ত করে তোলার প্রাথমিক পর্যায়ে একটু বেগ পেতেই হয়। এসব প্রতিকূলতা ঠেলে দিতে পারেন কেবল প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে। তবে অতিরিক্ত প্রশ্ন করতে যাবেন না। আপনার প্রশ্নগুলো হোক কাজ রিলেটেড।

মেন্টর ধরুন

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মেন্টর। তাদের সহায়তা নেওয়া শিখতে হবে। সরাসরি কেউ হয়তো আপনাকে বুদ্ধি–পরামর্শ বা দিকনিদের্শনা দেবে না। প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কোনো কর্মী বা কর্মজীবনে অভিজ্ঞ কোনো ব্যক্তিত্বকে নিজের ক্যারিয়ারের পরামর্শক হিসেবে নিতে পারেন। তাঁর সঙ্গে নিজের অবস্থান, ভবিষ্যতের সুযোগ নিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন।

নিজেকে প্রমাণ

প্রতিষ্ঠান সেই কর্মীকেই পছন্দ করে, যে বা যারা যে কোনো অবস্থায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারে। তাই আপনাকেও প্রমাণ করতে হবে, আপনি যে কোনো সময়, যে কোনো পরিস্থিতিতে কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছু করতে পারেন। শুধু কাজের মাধ্যমেই নয়, বাড়তি উদ্যোগ নিয়েও এ পথটাকে পরিস্কার করতে হবে।

নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। কী কী বিষয়ে বা ক্ষেত্রে দক্ষতা বিকাশ করতে হবে, জানতে হবে। যা-তা করে ইন্টার্নশিপ করা যাবে না। শিক্ষাজীবনে অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের দক্ষতা থাকে না, ইন্টার্নশিপের সময়ে সেগুলো অর্জন করা জরুরি। কর্মজীবনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার সব ধরনের সুযোগ নিতে হবে এখান থেকেই।

যোগাযোগ

জব খোঁজার সবচেয়ে বড় রাস্তাটি হচ্ছে যোগাযোগ। যার যোগাযোগ যত বেশি তার চাকরিও মেলে তত দ্রুত। তাই ইন্টার্নশিপের সময় সুপারভাইজারসহ সবার সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুন। তাছাড়া ইন্টার্নশিপে আপনাকে প্রচুর শিখতে হবে। এখানকার অভিজ্ঞতাও আপনার চাকরির জন্য বাড়তি সুবিধা প্রদান করবে। তবে শেখার সঙ্গে সঙ্গে ইন্টার্নশিপের সময়টা উপভোগ করার চেষ্টা করুন। এতে আপনার শিখন প্রক্রিয়া সহজ হয়ে উঠবে। মনে রাখবেন, এ সময়টা কিন্তু ক্যারিয়ারের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ!

কোম্পানির ভালো-মন্দ

নক বেশি এগিয়ে থাকে কাজ-কর্মে এবং প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-কানুন পালনে। মনে রাখবেন, আপনার ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানও উপকৃত হচ্ছে। পাশাপাশি আপনিও। কোম্পানির স্থায়ীভাবে রিক্রুটমেন্টের সময় যারা ইন্টার্নশিপে অংশ নেন, তাদের মধ্যে যারা চাকরির সুযোগ পান তারা সত্যিকার অর্থে কোম্পানির ভালো-মন্দ নতুনদের চেয়ে বেশি বোঝে। যারা পুরোপুরি রিক্রুটমেন্ট প্রসেসের মাধ্যমে চাকরি পায়, তাদের চেয়ে ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামের শিক্ষানবিশরা অনেক বেশি এগিয়ে থাকে কাজ-কর্মে এবং প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-কানুন পালনে। মনে রাখবেন, আপনার ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানও উপকৃত হচ্ছে। পাশাপাশি আপনিও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *