ভাষা দক্ষতা যাচাইয়ের বিভিন্ন ধরণের ধাপ

ভাষা দক্ষতা পরিমাপ করা একটি জটিল জিনিস। ফলস্বরূপ, অনেক ধরণের ভাষা পরীক্ষা রয়েছে, যা বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন দক্ষতা পরিমাপ করতে ব্যবহার হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি পরীক্ষা হতে পারে এমন আপনাকে উচ্চস্বরে একটি প্যাসেজ পড়তে বলতে হবে, আবার অন্য একটি পরীক্ষা আপনাকে প্যাসেজ সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দিতে বলে। এ ব্লগ এ আমরা ল্যাংগুয়েজ টেস্ট এর বিভিন্ন দক্ষতার পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা করবো। 
ভাষা পরীক্ষার ধরন
ল্যাঙ্গুয়েজ প্রফিসিয়েন্সি টেস্ট
ল্যাঙ্গুয়েজ প্রফিসিয়েন্সি টেস্ট একজন ব্যক্তির ভাষায় দক্ষতার মাত্রা পরিমাপ করে, তারা কীভাবে শিখেছে বা যেভাবে শিখেছে সে অনুযায়ী ফ্লুয়েন্টলি কথা বলতে পারে কিনা। একজন স্প্যানিশ বলতে বলতে বড় হয়েছে এবং একজন প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর শিখেছে, এই পরীক্ষায় দুইজন এর ই সমান স্কোর হওয়া উচিত। কারণ প্যারট ল্যাঙ্গুয়েজ এই পরীক্ষা কর্মক্ষেত্রের জন্যই তৈরি করা হয়েছে,ল্যাঙ্গুয়েজ প্রফিসিয়েন্সি পরিমাপ করার জন্য এটি ডিজাইন করা হয়েছে। এই টেস্টে ভাষায় কে কতটা দক্ষতা সম্পন্য তা বের করার চেষ্টা করা হয়, কে কোন জায়গা থেকে এই দক্ষতা রপ্ত করে এসেছে তা কোনো বিষয় না। 

এপ্টিটিউড টেস্ট
এপ্টিটিউড টেস্ট হল ভাষার একটি যোগ্যতা পরীক্ষা যেখানে কেউ একটি নির্দিষ্ট ভাষা কতটা ভাল ব্যবহার করে তা পরিমাপ করা হয় না, তারা যে কোনো একটি সাধারণ ভাষা কতটা ভালভাবে রপ্ত করে সেই পরীক্ষা করা হয়। সেই কারণে, প্রার্থীদের নির্বাচন করার সময় এই পরীক্ষায় তাদের একটি নতুন ভাষা শিখতে হতে পারে এবং সেটা তারা কতটুকু বা কত তাড়াতাড়ি রপ্ত করতে পারছে তা দেখাতে হবে।

ডায়াগনসটিক টেস্ট
ল্যাঙ্গুয়েজ প্রফিসিয়েন্সি টেস্ট সাধারণত একজন ব্যক্তির সম্পূর্ণ ভাষা দক্ষতার একটি সাধারণ মূল্যায়ন প্রদান করে। অন্যদিকে, ডায়াগনস্টিক পরীক্ষাগুলি সেই দক্ষতার মধ্যে কোন নির্দিষ্ট পয়েন্টে ওই ব্যক্তি দুর্বল না এবং কোন নির্দিষ্ট পয়েন্টগুলোতে দুর্বল তা সনাক্ত করে। ভাষার দক্ষতা স্পেচিফিকভাবে উন্নত করার উপায় সনাক্ত করতে এই ধরনের পরীক্ষা ব্যবহার করা হয়।

প্লেসমেন্ট এন্ড এচিভমেন্ট টেস্ট
প্লেসমেন্ট এন্ড এচিভমেন্ট টেস্ট গুলি সাধারণত ভাষা শেখার জায়গায় বা পরিবেশে একচেটিয়াভাবে ব্যবহৃত হয়। একটি প্লেসমেন্ট টেস্ট দক্ষতা এমনভাবে পরিমাপ করে যাতে একই রকম দক্ষ শিক্ষার্থীদের এক যায়গায় একত্রিত করা যায়। এচিভমেন্ট টেস্ট নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একজন শিক্ষার্থীর অগ্রগতি পরিমাপ করে।

ভাষা দক্ষতার পরীক্ষা -নির্দিষ্ট প্রকারভেদ
ভাষা বলা, শোনা, লেখা, পড়া, বোঝা, ব্যাখ্যা করা, অনুবাদ করা এবং আরও অনেক কিছু করা যায়। যদিও একটি বড়সড় পরীক্ষা দিয়ে এই সমস্ত দক্ষতা পরিমাপ করা সম্ভব হতে পারে, তবে এটি পরিচালনা করা খুবি কঠিন হয়ে পড়বে। এছাড়াও, এই জাতীয় পরীক্ষা বেশিরভাগ পরিস্থিতিতেই প্রয়োজনীয়তার চেয়ে অনেক বেশি তথ্য সরবরাহ করবে। সেই কারণে, বেশিরভাগ ভাষা পরীক্ষা চারটি প্রধান দক্ষতা পরিমাপের মধ্য দিয়েই করা হয়।
1. স্পিকিং
2. লিসনিং
3. রিডিং
4. রাইটিং

স্পিকিং টেষ্ট
স্পিকিং টেষ্ট বলতে বোঝায় ভাষার অভিব্যক্তি যা হতে পারে কণ্ঠে বা চিহ্ন বা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে। এটি কর্মক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রয়োজনীয় দক্ষতা। খুব কম জব পজিশনেই স্পিকিং স্কিল এর প্রয়োজন হয় না। কথা বলা পরীক্ষা করার জন্য, একজন ব্যক্তিকে পরীক্ষার ভাষায় কথা বলতে বলা হয়, সাধারণত প্রম্পটের জবাবে। প্রম্পটগুলি কীভাবে সরবরাহ করা হয় তার উপর নির্ভর করে মাঝে মাঝে লিসনিং এন্ড রিডিং টেস্ট ও একসাথে নিয়ে ফেলা হয়। তবে তাতে যে ভাষার পরীক্ষা সম্পূর্ণ হচ্ছে তা নয়।

লিসনিং টেস্ট
সহজ কথায়, লিসনিং বলতে স্পিচ এর অভ্যর্থনা কে বোঝায়। লিসনিং টেষ্ট হিয়ারিং টেষ্ট থেকে আলাদা কারণ একটি হিয়ারিং টেষ্টে পরিমাপ করে যে আপনার কান সাধারণভাবে কতটা শব্দ গ্রহণ করতে পারে – সেটা ভাষা নাও হতে পারে। কেউ যদি কোনো বক্তৃতা শোনে এবং এরপর সে সেটা কতটুকু বুঝেছে তা প্রকাশ করে তার লিসনিং টেষ্ট এ তার দক্ষতা কতটুকু। সেই কারণে, লিসনিং টেস্ট এ প্রায় সবসময়ই ন্যূনতম স্তরের স্পিকিং বা রাইটিং স্কিল এর প্রয়োজন হয়।

রাইটিং টেষ্ট
কথা বলা যদি ভাষার মাধ্যমে চিন্তার বহিঃপ্রকাশ হয়, লেখা মানেই প্রতীকের মাধ্যমে ভাষার প্রকাশ। একটি রাইটিং টেষ্ট এ সাধারণত পরীক্ষার দ্বারা প্রদত্ত প্রম্পটের প্রতিক্রিয়া হিসাবে লেখার নমুনাগুলো সংগ্রহ করে এবং বিশ্লেষণ করে। যতদূর দেখা যায় ভাষা দক্ষতার ক্ষেত্রে, হাতের লেখা এবং টাইপিংয়ের মধ্যে কোন অর্থপূর্ণ পার্থক্য নেই।

রিডিং টেষ্ট
রিডিং মানে সাধারণত লিখিত ভাষার ব্যাখ্যা। এই টেষ্ট এ একটি প্যাসেজ প্রদান করা হয় এবং পরীক্ষার্থীর প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করা হয়। প্যাসেজ থেকে বা প্যাসেজ সংবলিত বিভিন্ন প্রশ্ন থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় পরীক্ষার্থী রিডিং টেষ্ট এ কতটুকু দক্ষতাসম্পূর্ণ।

আইইএলটিএস টেষ্ট(IELTS)
আইইএলটিএস ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত একটি পরীক্ষা। ইউরোপ বা আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির জন্য অনেকগুলো ধাপ ও প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা একেক রকম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি ও বৃত্তি-ফেলোশিপের ক্ষেত্রে রিকমেন্ডেশন লেটার, স্টেটমেন্ট অব পারপাস, জীবনবৃত্তান্ত, বিভিন্ন সামাজিক কাজে সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়। শুধু ভালো আইইএলটিএস স্কোর দিয়ে বৃত্তি বা ফেলোশিপ অর্জন করা যায় না। আইইএলটিএস স্কোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদনের একটি যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয়। আমাদের মাতৃভাষা যেহেতু বাংলা, তাই ইংরেজি ভাষায় আমাদের দক্ষতা কতটুকু, আইইএলটিএস স্কোরের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা জানতে চেষ্টা করে। এই পরীক্ষায় ও চারটি প্রধান টেস্ট(স্পিকিং, লিসনিং, রিডিং, রাইটিং) এর মাধ্যমে পরীক্ষার্থী নির্বাচন করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *