গবেষণাপত্র কি এবং কি ভাবে লিখতে হয়!

অ্যাকাডেমিক জীবনে রিসার্চ পেপার বা গবেষণাপত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বিশেষ করে যাঁরা বাইরে পড়তে বা ডিগ্রি নিতে যান। সঠিক গাইডলাইনের অভাবে অনেকেই গবেষণাপত্র নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। 

গবেষণা ( Research ) হলাে জ্ঞান অনুসন্ধান করা। জ্ঞান অনুসন্ধান নতুন কোনাে বিষয় বা সমস্যার জন্য হতে পারে। আবার পুরাতন কোনাে বিষয়ে আমাদের সামান্য কিছু জ্ঞান আছে , সে সম্পর্কে আরাে বিস্তারিত তথ্যের জন্য গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞান অনুসন্ধান হতে পারে। বস্তুজগতের কোনাে নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে নিয়মতান্ত্রিক এবং বৈজ্ঞানিক উপায়ে জ্ঞান অনুসন্ধান করাই হলাে গবেষণা। নিয়মতান্ত্রিক অর্থ হলাে তত্ত্ব সংগ্রহ , বিশ্লেষণ এবং প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করা । আর বৈজ্ঞানিক উপায় হলাে গবেষণার প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির সব বৈশিষ্ট্য বজায় রাখা। সাধারণত কোনো বিষয় নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন এবং সিদ্ধান্তে পৌঁছানোটা হলো গবেষণা।

opportunity hub

গবেষণার প্রস্তাবনা কি?

কোন গবেষণা করার জন্যে তার উদ্দেশ্য, গুরুত্ব, অনুমিত সিদ্ধান্ত, পদ্ধতি, অর্থবাজেট ও সময়ের বণ্টন ইত্যাদি দেখিয়ে কোন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চেয়ে যে প্রস্তাবপত্র উপস্থাপিত হয় তাই হলো গবেষণার প্রস্তাবনা।

কেন গুরুত্বপূর্ণঃ

গবেষণা প্রস্তাব যেহেতু গবেষণা কার্যক্রমের পূর্ব পরিকল্পনা ও রূপরেখা । তাই গবেষণা প্রস্তাবের গুরুত্ব অপরিসীম। গবেষণা প্রস্তাব অনুযায়ীই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কারণ গবেষণা প্রস্তাব ছাড়া একটি গবেষণা সম্পূর্ণ করা সম্ভব নয়। একডেমিক (মাস্টার্স থিসিস, এম.ফিল, ও পিএইচডি) কাজে যেমন লাগে ঠিক তেমনি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদান পেতে গবেষণার প্রস্তাবনা দরকার পরে। তাই সেসব কথা মাথায় রেখে বিসিপিআরসি’র এ আয়োজন।

প্ল্যানঃ

গবেষণার জন্য প্রথমে একটি রিসার্চ পেপার বা থিসিস পেপারের ধাপ এবং অধ্যায়গুলো সম্পর্কে জানতে হবে যেগুলো হলো– 

  • আপনার কাজের বিষয় নির্বাচন করুন। 
  • আপনার গবেষণা পরিচালনা করুন ও তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করুন।
  • পেপারের রূপরেখা তৈরি করুন।
  • আপনার প্রথম খসড়া শুরু করুন।
  • সম্পাদনা এবং সংশোধন করুন। 

সারাংশঃ

একটি ভালো সারাংশই পারে খুব সহজে ব্যাখ্যা করতে যে কেন লেখা বা পেপারটি গুরুত্বপূর্ণ এবং রিলেভেন্ট। সাধারণত এটি ৩০০ থেকে ৫০০ শব্দের মধ্যে হলে ভালো হয়। এখানে যা যা আসবে–

  • টপিক নিয়ে আলোচনা
  • কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ
  • ডেটা কালেকশন এবং অ্যানালাইসিসের মেথড বা পদ্ধতি
  • রেজাল্ট এবং সারমর্ম।

ভূমিকাঃ

একটি ভালো ভূমিকা তার পেপারকে প্রেজেন্ট করে। তাই আপনি চাইলে সম্পূর্ণ কাজ করার পর আবার এডিট করে ভূমিকাকে সুন্দর করতে পারেন। এখানে আপনি আপনার কাজের বিবৃতি, কারণ, প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে লিখবেন। এর জন্য কিছু ধাপ বা পর্যায় অনুসরণ করা যেতে পারে। *ব্যাকগ্রাউন্ড: ব্যাকগ্রাউন্ড এ আপনি আপনার কাজ সম্পর্কে লিখবেন। কেন আপনি এটাকে বেছে নিয়েছেন। বর্তমানে কেন এটি রিসার্চের প্রয়োজনীয়তা রাখে? এর বর্তমান প্রেক্ষাপট কী এবং আপনার সমাজ বা দেশে এর অবস্থান কোথায়? এ ছাড়া পেপারের লক্ষ্যের একটি বিবৃতি, কেন অধ্যয়ন করা হয়েছিল, বা কেন পেপারটি লিখছেন। তবে এখানে এবস্ট্রাক্টের পুনরাবৃত্তি করবেন না। রিসার্চের পটভূমি পড়ে যেন পাঠক বুঝতে পারে পেপারের প্রসঙ্গ এবং তাৎপর্য। ভূমিকাতে থিসিসের প্রশ্নগুলোর ওপর ফোকাস করা উচিত। সব কাজ থিসিসের লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সরাসরি প্রাসঙ্গিক হওয়া উচিত। এবং আপনার কাজের পরিধি ব্যাখ্যা করুন, কী অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং কী হবে না। ব্যাকগ্রাউন্ডের পর রিসার্চের উদ্দেশ্য, প্রয়োজনীয়তা এবং সমস্যার বিবৃতি এবং গুরুত্ব আলোচনা করবেন। এখানে থাকবে–

  • Research objective (৪-৫ লাইনে পয়েন্ট করে আপনার রিসার্চের উদ্দেশ্য লিখবেন)
  • Statement of the problem (বর্তমানে কোন সমস্যা সামনে রেখে আপনি এই টপিক নির্ধারণ করেছেন সেটা বলবেন)
  • Significance of the study (এখানে আপনি আপনার টপিকের গুরুত্ব আলোচনা করবেন)।

সাহিত্য পর্যালোচনাঃ

সাহিত্য পর্যালোচনা হলো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিভিন্ন প্রকার লেখনী, আর্টিকেল বা অন্যান্য পেপারের পর্যালোচনা। এটি বর্তমান অবস্থার একটি ওভারভিউ প্রদান করে, যা আপনাকে প্রাসঙ্গিক তত্ত্ব, পদ্ধতি এবং বিদ্যমান গবেষণার ফাঁক শনাক্ত করতে সাহায্য করে। একটি সাহিত্য পর্যালোচনায় লেখার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক প্রকাশনাগুলো (যেমন বই এবং জার্নাল) সন্ধান করা, সেগুলোকে সমালোচনামূলকভাবে বিশ্লেষণ করা এবং আপনি যা পেয়েছেন তা ব্যাখ্যা করতে হয়। এর জন্য কিছু মূল বিষয় রয়েছে:

  • প্রাসঙ্গিক সাহিত্যের বা লেখনীর জন্য অনুসন্ধান করা
  • উৎসের বা সোর্স এর মূল্যায়ন
  • থিম, আলোচনা, সমালোচনা, বিতর্ক এবং গ্যাপ শনাক্ত করা।
  • রেফারেন্স ব্যবহার করে আপনার সাহিত্য পর্যালোচনা লেখা। মনে রাখবেন যেকোনো লেখার সময় অবশ্যই রেফারেন্স দেবেন। রেফারেন্সের অনেক পদ্ধতি আছে, তার যেকোনো একটি ফলো করলেই হবে।

গবেষণার পদ্ধতিঃ

এখানে আপনি আপনার কাজের তথ্য সংগ্রহের উপায়, মাধ্যম এবং বিশ্লেষণের পদ্ধতি বর্ণনা করবেন, যাতে পাঠক আপনার ফলাফলের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে।

  • আপনার স্যাম্পল সাইজ এবং স্যামপ্লিং প্রসিডিউর কী?
  • কাদের কাছ থেকে আপনি তথ্য সংগ্রহ করেছেন?
  • আপনার তথ্য সংগ্রহের এলাকা বা এরিয়ার বর্ণনা এবং ম্যাপ।
  • আপনি কি সরাসরি ডেটা ফিল্ডে গিয়ে সংগ্রহ করেছেন না কী অনলাইন থেকে নিয়েছেন।
  • আপনার উপকরণ, পদ্ধতি ও তত্ত্বের বর্ণনা।
  • গণনা, কৌশল, পদ্ধতি এবং সরঞ্জাম।
  • সীমাবদ্ধতা, অনুমান, এবং বৈধতার পরিসর।
  • কোনো বিশেষ পরিসংখ্যানগত সফটওয়্যার ব্যবহার করলে রেফারেন্সসহ পদ্ধতির বর্ণনা।

তবে এখানে ফলাফলের বিবরণ অন্তর্ভুক্ত করবেন না।

Research paper writing

ফলাফল (Result):

ফলাফল হল পরিসংখ্যান, টেবিল এবং গ্রাফ সহ পর্যবেক্ষণের প্রকৃত বিবৃতি। নেতিবাচক ফলাফলের পাশাপাশি ইতিবাচক ফলাফল উল্লেখ করুন। এ অধ্যায়ে ফলাফল ব্যাখ্যা করবেন না পরবর্তিতে আলোচনার জন্য এটি সংরক্ষণ করুন। মূল ফলাফল অনুচ্ছেদের শুরুতে স্পষ্ট বাক্যে বলা উচিত। যাতে পাঠক একটি আইডিয়া পেতে পারে এবং উপ-শিরোনাম ব্যবহার করে লজিক্যাল সেগমেন্টে আপনার ফলাফল বিভক্ত করুন।

আলোচনা (Discussion):

শুরুতে কয়েকটি বাক্য দিয়ে শুরু করুন যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়। আলোচনা বিভাগটি নিজেই একটি সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধ হওয়া উচিত, নিম্নলিখিত প্রশ্ন এবং বিষয়ের উত্তর যেন দেয়:

  • পর্যবেক্ষণ এর প্যাটার্ন টা কেমন?
  • ফলাফলের মধ্যে সম্পর্ক, প্রবণতা এবং সাধারণীকরণগুলি কী কী?
  • আপনার এক্সপেক্টেশন টা কি ছিল এবং ফলাফল কি পেলেন?
  • আপনার প্রেডিকশন সঠিক কি না?
  • আগের কাজের সঙ্গে আপনার মতামত বা ডিসিশন এর পার্থক্য আছে কি?
  • ভূমিকায় দেওয়া পটভূমির পরিপ্রেক্ষিতে ফলাফলগুলি ব্যাখ্যা করুন-মূল প্রশ্নের সঙ্গে বর্তমান ফলাফলের সম্পর্ক কী?
  • আমরা এখন কী জানি বা বুঝি যা আমরা বর্তমান কাজের আগে জানতাম না বা বুঝতাম না?
  • প্রতিটি ব্যাখ্যাকে সমর্থন করে প্রমাণ বা যুক্তির লাইন অন্তর্ভুক্ত করুন।
  • বর্তমান ফলাফলের তাৎপর্য কি: কেন আমাদের এ বিষয়ে চিন্তা করা উচিত?

উপসংহার (Conclusion):

এ অংশে আপনার পর্যবেক্ষণ এর শক্তিশালী এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো লিখে ফেলুন। এ রিসার্চ এর মাধ্যমে আপনি যে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন তা বর্ণনা করুন। বর্তমান কাজের ফলে নতুন পর্যবেক্ষণ, নতুন ব্যাখ্যা এবং নতুন অন্তর্দৃষ্টিগুলির সংক্ষিপ্তসার করুন। এবং আপনার ফলাফলের বিস্তৃত প্রভাব অন্তর্ভুক্ত করুন। তবে এবস্ট্রাক্ট, ভূমিকা বা আলোচনার শব্দের পুনরাবৃত্তি করবেন না। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *