উদ্যোক্তা হতে গেলে কি করা উচিত? Part 1

আসলে, চাকরি করব না চাকরি দেব, এই মানসিকতার উপর ভিত্তি করে উৎপত্তি হয়েছে, উদ্যোক্তা। প্রতিবছর লক্ষ্য লক্ষ্য শিক্ষার্থী, নিজের পড়াশোনা শেষ করে, পরিবারের দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পরে, চাকরি খোঁজার উদ্দেশ্যে। কিন্তু সকলের ক্ষেত্রে সেই চাকরিটি আর তার ভাগ্যে জুটে না। এছাড়াও, অন্যের অধীনে চাকরির মানসিকতা বর্তমানের তরুণ প্রজন্মের নেই বললেই চলে। তাই নিজের স্বপ্ন, পূর্ণ স্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে মানুষ এখন পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে উদ্যোক্তাকে।

বর্তমানে সময়ের সাথে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন এই উদ্যোক্তা পেশায়। অনেক মানুষ নিজের বর্তমান পেশা ছেড়ে এই সেক্টরে, মনোনিবেশ করছে। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাবে অনেকেই তেমন কোন সাফল্য পাচ্ছে না এই পেশায়। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে অধিষ্ঠিত করার জন্য যারা পরিপূর্ণ গাইডলাইন খুঁজছেন, তাদের জন্যই মূলত আজকের আলোচনা। আশা করি, একজন উদ্যোক্তা হতে হলে কি করবেন, তার পরিপূর্ণ গাইডলাইন হয়ে উঠবে আজকের আলোচনা।

১. চ্যালেঞ্জ নিতে হবে

কেউ এসে আপনাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিবে না। বরং একজন উদ্যোক্তা হিসেবে, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে, নিজেকেই নিজের উপর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে হবে।  চ্যালেঞ্জ উদ্যোক্তাদের, কাজ করার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা হিসেবে ভূমিকা পালন করবে। আপনি যদি আপনার পরবর্তী চ্যালেঞ্জের কথা চিন্তা করেন, তাহলে নিজের কাজকে সেইভাবে গুছিয়ে নিতে পারবেন। 

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ধরুন আপনি কোন জিমে গিয়েছেন। আপনার বডির শক্তি বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে, আপনাকে প্রথমে ১০ কিলো ভর নিতে হবে, বাইসেপ তৈরি করার জন্য। প্রথমে খানিকটা কষ্ট হতে পারে, কিন্তু আপনি যদি একবার বডির শক্তি বৃদ্ধি করতে পারেন, তাহলে বেশি কষ্ট হবে না। মূলত চ্যালেঞ্জ আপনাকে যেকোনো সাধারণ কাজ কিংবা কঠিন কাজকে সহজ করে তুলে। একজন উদ্যোক্তা হতে হলে, আপনাকে সবসময় পরবর্তী চ্যালেঞ্জ খুঁজে নিতে হবে।

২. ঝুঁকি নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে 

মানুষ সবসময় ঝুঁকি নেওয়া থেকে, নিজেকে গুটিয়ে রাখে। কিন্তু একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে, আপনাকে অবশ্যই ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। ব্যবসা করার কৌশল জানা থাকলে, ঝুঁকি নিলেও ব্যবসায় ব্যর্থ হওয়ার সম্ভবানা কমে যাবে।কারণ সফল উদ্যোক্তারা জানে যে, তাদের কি ধরণের ঝুঁকি নিতে হয়? কি ধরণের ঝুঁকি নিতে হয় না। ঝুঁকি নেওয়াটা অনেক বিপদজনক হতে পারে, কিন্তু ঝুঁকির থেকে যে সুবিধা আপনি পেতে পারেন, তা আর অন্য উপায় অবলম্বন করে পাবেন না। তাই কি ধরনের ঝুঁকি, আপনাকে সফলতা প্রদান করতে পারে, তা আপনাকে বেছে নিতে হবে।

৩. আস্থা রাখুন নিজের উপর

আপনি যদি নিজের উপর ভরসা না রাখেন, তাহলে কে রাখবে? একজন পরিপূর্ণ সফল উদ্যোক্তা হতে হলে, আপনাকে পরিপূর্ণ রূপে যা শিখবেন, তা কাজে লাগাতে হবে। নিজের স্কিল সমূহের উপর বিশ্বাস রেখে কাজ করলে, আপনি অনেক ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারবেনযখন আপনি উদ্যোক্তা হিসেবে কোন ধরণের ব্যবসা করবেন, আপনি মনে রাখবেন যে, কি পরিমাণ জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা আপনার রয়েছে। অনেক উদ্যোক্তারাই অন্যের অধীনে বহু বছর কাজের পর, এই পেশায় নিজেদের আন্তঃ-নিয়োগ করে। তাই যখন কেন ধরণের সাহায্যের প্রয়োজন হবে, তখন অবশ্যই যে কারো কাছে সাহায্য চাইতে পারেন।

মাত্র ৩ হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করে, এখন বাংলাদেশের প্রধান মোবাইল ফোন এক্সসরিজ নির্মাতা হালিমা টেলিকম। এরকম খবর উঠে এসেছে, প্রথম আলোর খবরে। সুতরাং, নিজের উপর আস্থা রেখে, ব্যবসা শুরু করে দিন। আপনার আত্মবিশ্বাস আপনাকে অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ।

৪. দূর করুন ভয়কে

ভয়কে দূর করার মানসিকতা থাকতে হবে। একজন উদ্যোক্তাকে, কোন ভুল চোখে পড়া মাত্রই, সেই ভুল সমাধান করার, মানসিকতা থাকতে হবে। ভয় নিয়ে আপনি কখনো একজন সফল উদ্যোক্তা হতে পারবেন না। একজন উদ্যোক্তা হবার যাত্রায় আপনি যদি ভয় নিয়ে চলতে থাকেন, তাহলে আপনি কখনো এগিয়ে যেতে পারবেন না। আপনাকে ভয় দূর করে, যেকোনো সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার মানসিকতা রাখতে হবে।

৫. লক্ষ্যকে অনুধাবন করুন

যখন আপনি আপনার লক্ষ্যকে, অনুধাবন করতে পারবেন, তখন সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করে যাবেন। সফল উদ্যোক্তা হতে হলে, আপনাকে সব সময় নানা ধরণের কাজ, একসাথে করার মানসিকতা পরিহার করতে হবে।  প্রতিবার দেখা যায়, একসাথে অধিক কাজ করলে আপনি কোন ধরণের কাজে সফলতা অর্জন করতে পারবেন না। তাই সময়ের সাথে সমন্বয় করে নিয়মিত একটি কাজ ভালোভাবে করার প্রতি নজর দিন। তাহলে আপনি একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন। 

৬. বিজনেস পার্টনার নির্ধারণ

এটি কিছুটা অবাক করার মতো হলেও, যেকোনো এন্ট্রোপ্রিনিয়রশীপে সাফল্যের চাবিকাঠি হল এটি। কারণ সাহায্য ছাড়া, কেউ কখনো সফল হতে পারবেন না। আপনি পার্টনার হিসেবে, এমন কাউকে বেছে নেওয়া উচিত নয় যে, শুধু আপনার দোষ সমূহ দেখে। বরং একজন সহযোগী হিসেবে, এমন কাউকে আপনাকে বেছে নিতে হবে যে, আপনার দোষ দেখার পাশাপাশি আপনাকে গুণগুলো প্রস্ফুটিত করতে সাহায্য করে থাকে। একজন ভালো সাহায্য-পরায়ণ মানুষ, আপনাকে সকল দিক থেকে পরিপূর্ণ সহায্য করবে। যা আপনাকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে, এগিয়ে রাখবে।

৭. মূলধন নিয়ে পরিকল্পনা করুন

স্টার্ট-আপ বলুন কিংবা ব্যবসার কথা বলুন, সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় অর্থের। এইটা জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে একটি অংশবিশেষ। অনেক উদ্যোক্তাদের দেখা যায় অর্থ সংগ্রহ করতে করতে, তাদের আর কোন পরিকল্পনা থাকেনা।

মূলত অর্থ সংগ্রহের জন্য মাধ্যম হল:

  • ব্যক্তিগত সংগ্রহ।
  • ইনভেস্টরের মাধ্যমে। 
  • স্টার্ট-আপ লোনের মাধ্যমে। 

আপনি কোন মাধ্যমে অর্থ নিবেন এবং তা কোন ক্ষেত্রে আপনাকে ব্যয় করতে হবে, তার জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। 

৮. গ্রাহক নির্ধারণ

সফল উদ্যোক্তারা তারা ভালো করেই জানে, তাদের গ্রাহক বা ক্রেতা কে? বেশিরভাগ ব্যবসা সমূহ এই জন্য সফল হয়না, কারণ তারা জানেনা যে, তাদের কাস্টমার কারা। ধরুন আপনি কোন ব্যবসা শুরু করেছেন, কিন্তু আপনি জানেন না আপনার পণ্য কাদের জন্য তৈরি করবেন, তাহলে আপনার ব্যবসা কিভাবে সফল হবে? আপনি কসমেটিকসের পণ্য তৈরি করেন স্বাভাবিক ভাবে আপনার ক্রেতা নারীরা। আবার, বাচ্চাদের পণ্য তৈরি করলে সেটার ক্রেতা কিন্তু বাচ্চারা নয়?

সুতরাং, একটি ব্যবসাকে সফল করতে হলে, আপনার গ্রাহক কে হবে, সেই সম্পর্কে আপনাকে ধারণা রাখতে হবে। তাদেরকে টার্গেট করে মার্কেটিং ও সেলস চালিয়ে যেতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *