উদ্যোক্তা হতে গেলে কি করা উচিত? Part 2

৯. বৃদ্ধি করুন নেটওয়ার্ক

নেটওয়ার্ক এর চেয়ে উত্তম মাধ্যম আর কিছুই নেই। তাই সফল হতে হলে, বৃদ্ধি করতে হবে নেটওয়ার্ক। আপনি যত বেশি সংখ্যক নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করবেন, মানুষের সাথে তত বেশি ইন্টারেকশন করতে পারবেন। ঠিক তত বেশি নিজের ব্যবসাসমূহ নিয়ে মানুষকে জানাতে পারবেন। একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে নেটওয়ার্ক বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দিতে হবে। 

১০. অভিযোগ শুনুন

আমি মনে করি, এটি এমন একটি টিপস যা সকল ধরণের ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে, জেনে রাখা উচিত। কারণ আপনার গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে, আপনি আপনার ব্যবসায়ের দুর্বল দিকসমূহ চিহ্নিত করতে পারবেন। আপনার গ্রাহকগণ আপনাকে অভিযোগ দিচ্ছে, কিন্তু আপনি সেই অভিযোগ আমলে নিচ্ছেন না, তাহলে ভবিষ্যতে আপনার কোন গ্রাহক থাকবে না। তাই আপনার গ্রাহকদের অভিযোগ মনোযোগের সহিত, সম্মান দিয়ে শুনার চেষ্টা করুন। যারা সফল উদ্যোক্তা হয়েছে, তারা তাদের কাস্টমারদের অভিযোগ গুরুত্বও সহকারে নিয়ে, সেই অভিযোগ সমাধান করে আজ তারা সফল হয়েছেন।

১১. প্রত্যাশা সীমিত রাখা

একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে, আপনাকে আপনার প্রত্যাশা সীমিত রাখতে হবে। কারণ হয়তো আপনি প্রত্যাশা এমন করেছেন, কিন্তু গ্রাহকদের তা পছন্দ হয়নি, তখন তা কোন কাজে আসবেনা।

১২. কেস স্ট্যাডিজ সম্পর্কে জানতে হবে

একজন উদ্যোক্তা হবার আগে, আপনি একজন মানুষ। আপনার ভালো লাগা, মন্দ লাগা থাকতে পারে। আপনি পছন্দের বই থাকতে পারে। কিন্তু যখন আপনি নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে চাইবেন আপনাকে কেস স্টাডিজ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। তাই বেশি বেশি এই বিষয়টি নিয়ে অধ্যয়ন করলে আপনাকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। বর্তমানে সব সফল উদ্যেক্তাদের কেস স্টাডিজ মানে তারা কিভাবে সফল হয়েছে এই সম্পর্কে জানা সহজ হয়ে গিয়েছে। ইউটিউব, ইন্টারনেট, ইবুক নানা মাধ্যমে সফল ব্যবসায়ীদের জীবনী জানতে পারবেন।

১৩. আত্মপ্রচারণা করতে হবে

অনেক উদ্যোক্তারাই নিজের সম্পর্কে, নিজের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে প্রচারণা করতে তেমন একটা পছন্দ করে না। কিন্তু এটা নিতান্তই ভুল ধারণ। একজন সফল ব্যবসায়ী হতে হলে, আপনাকে অবশ্যই প্রচারণা করতে হবে আপনার প্রতিষ্ঠানের। এতে আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ বাড়বে। মানুষের সাজেশন শুনবেন, যা আপনার ব্যবসা প্রসারে ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি একজন সফল উদ্যোক্তা হতে, আপনাকে উৎসাহিত করবেন।

১৪. শেখা এবং পরিবর্তন করা

একজন সফল উদ্যোক্তা স্বল্প সময়ে, নতুন নতুন জিনিস শিখে তা কাজে লাগাতে চায়। যেকোনো ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সৃজনশীল মন মানসিকতা তার ব্যবসার উন্নতির জন্য খুব বেশি প্রয়োজন। কারণ আপনি যত বেশি শিখবেন, তত বেশি জানবেন ঠিক সমপরিমাণে আপনি কাজে লাগাতে পারবেন।সফল উদ্যোক্তা হতে হলে শুধুমাত্র পণ্য বিক্রি করলে হবে না বরং উপস্থাপন করতে হবে। আপনার পণ্যসমূহ শুধুমাত্র বিক্রি করলে হবে না বরং গ্রাহকদের কাছে সেই পণ্য তুলে ধরার জন্য ট্রায়ালের ব্যবস্থা করতে হবে।

অ্যাপেল নিত্য নতুন তাদের টেকনোলজি পরিবর্তন করে মার্কেট ডোমিনেনট করছে। কিন্তু নোকিয়া বাজার থেকে হারিয়ে গিয়েছে, শুধু পরিবর্তন করার ক্ষমতা না থাকার কারণে।

১৫. কাজ করতে হবে 

কথা বলার চেয়ে, তা মূলত কর্মের মাধ্যমে সম্পাদন করলে মানুষের মাঝে বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করে থাকে। কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করা, ব্যর্থতা নিয়ে আলাপ আলোচনা করা খুবই সহজ। কিন্তু আপনি যদি আলোচনার কম করে, বরং কাজ বেশি করেন তাহলে আপনার কাজ মানুষ বেশি মনে রাখবে। আপনি যদি মনে করেন, একদিনের পরিশ্রম করে, আপনি সফলতা অর্জন করবেন, তা নিতান্ত ভুল ধারণা ছাড়া কিছুই না। যারা সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন, তাদের দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন যে, সফলতার কোন ক্ষুদ্র উপায় নেই। তাই যারা সফল হয়েছেন, তারা তাদের মূল্যবান সময়কে কাজের পেছনে দিয়েছেন এবং তার প্রাপ্ত ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করেছেন।

আপনি কি জানেন, সারাদিন শুয়ে বসে কাটানো আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কতটা হানি-কারক? শুধুমাত্র একটি লাভজনক ব্যবসা করলে আপনি সফল উদ্যোক্তা হতে পারবেন না। আপনি যদি নিজেকে সেরা উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান আপনাকে সেই লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে। ব্যবসায়ের পাশাপাশি আপনি নিজের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। আপনাকে আপনার ব্যবসা পরিচালনা জন্য শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি নিয়মিত কাজ করে যেতে হবে। 

১৬. প্রশ্ন করতে হবে

আপনি সবকিছু জানেন, এমনটা ভাবা মোটেও ঠিক না। সকলে সকল কিছু জানে না। আপনাকে কোন না কোন সময়ে প্রশ্ন করতে হবে। মেন্টরের কাছে সাহায্য চাইতে হবে। প্রশ্ন করে একজন উদ্যোক্তার সবচেয়ে বড় গুন বলে বিবেচিত হয়েই থাকে।  একজন উদ্যোক্তা হতে হলে, প্রশ্ন করার মানসিকতা থাকতে হবে। সেই প্রশ্ন উত্তর পেয়ে, তা কাজে লাগাতে হবে। এই গুণ যেকোনো সফল উদ্যোক্তা হবার পূর্ববর্তী বলে বিবেচিত হয়। 

১৭. ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে

একজন উদ্যোক্তার জীবনে সফলতার আগে ব্যর্থতা আসে। রাতারাতি উদ্যোক্তা হবার কোন ধরণের  শর্টকাট উপায় নেই মেধা, মনন,ধৈরজ  পরিশ্রম উদ্যোক্তা হবার পূর্বশর্ত। সময়ের উৎকর্ষতার সাথে, ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতির ফলে মানুষে জীবনে সাধিত হয়েছে বিপ্লব। অনেক সময় ব্যর্থ হতে পারেন আপনিও। তাই আপনাকে জানতে হবে, কিভাবে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সামনে এগোতে হবে। মনে রাখবেন, আপনার প্রথম বিজনেস যদি ব্যর্থ হয়ে থাকে, আপনাকে দ্বিতীয় বিজনেস করতে পারেন এবং প্রথম বিজনেসের ভুলগুলো থেকে শিক্ষাটা দ্বিতীয় বিজনেসে কাজে লাগাতে পারেন। 

উপসংহার

রাতারাতি নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য, মানুষ এখন আর চাকরির পিছে ছুটতে হচ্ছে না। বরং চাকরি বাদ দিয়ে, ভিন্ন ধারার পেশায়, মানুষ এখন আগ্রহী হচ্ছে। সুতরাং, উদ্যোক্তা হতে চাইলে, এখনই শুরু করে দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *